ভোলা টাইমস ডেক্স,
আজ ১১ নভেম্বর’২৪ ইং সোমবার সকাল ১০টায় ভোলা হাটখোলা মসজিদ চত্বর থেকে ভোলার গ্যাস ভোলায় চাই ও ভোলা- বরিশাল সেতু বাস্তবায়নের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভোলা জেলা উত্তর শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠিত।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ভোলার গ্যাস ভোলায় চাই আন্দোলন ও ভোলা বরিশাল সেতু বাস্তবায়ন কমিটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক এম. ওবায়েদুর রহমান বিন মোস্তফা।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা হিসেবে আমাদের ভোলার অবকাঠামগত বিশেষত্ব রয়েছে। যে বিশেষত্বের কারণেই ভোলা উন্নয়নের দিক হতে পিছিয়ে পড়ছে। ভোলাতে আজও গড়ে ওঠেনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি মেডিকেল কলেজ বা বড় কোন শিল্প কারখানা। একটি মাত্র সেতু উপস্থাপিত হলেও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ভোলা- বরিশাল সেতুর অভাবে সমগ্র দেশ আজ সড়ক যোগাযোগের অধীন হলেও ভোলা ঐ নেটওয়ার্ক এর বাহিরে। বিগত স্বৈরাচারী সরকার ভোলায় প্রাপ্ত গ্যাস ব্যবহার করে ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেও ভোলার বিদ্যুতের জন্য রেন্টালের উপর নির্ভর করে আজ ভোলার বিদ্যুত ব্যবস্থাও সংকটাপন্ন। বোলার বিদ্যুৎ যায় জাতীয় গ্রীডে অথচ ভোলা পায় রেন্টাল। মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য অনুসারে সর্বশেষ ভোলায় প্রাপ্ত গ্যাসের পরিমাণ ৫-৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট যার বাজার মূল্য পাঁচ থেকে ছয় লক্ষ কোটি টাকা। এছাড়াও ভোলায় ২০২৮ সনের মধ্যে ২৯টি গ্যাস কূপ খনন করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৫ থেকে ২০ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এরপরেও অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় ভোলার গ্যাস তরলীকৃত করে দেশের প্রয়োজনে কন্টেইনারে করে দেশের অন্যান চলে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ভোলার ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ প্রাপ্তির যে ন্যায্য অধিকার তা ভোলা বাঁশি পাচ্ছে না। পোলার গ্যাস আর বিদ্যুৎ না পায়ে ভোলা ইকোনমিক জোন হিসেবে গড়ে উঠেছে।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো বলেন, ভোলা- বরিশাল সেতুর অভাবে সমগ্র দেশ সড়ক যোগাযোগের অধীন হলেও ভোলা ওই নেটওয়ার্কের বাহিরে। দেশের প্রায় ৩৫% ইলিশ সহ প্রায় ৪০% মৎস্য আহরণ হয় এই জেলায়। বৈরী আবহাওয়ায় নৌপথ বন্ধ হলে সেতুর অভাবে কোটি কোটি টাকার মৎস্য নষ্ট হয়ে যায়। ভোলার প্রায় ২০ লক্ষ জনগণ সড়ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে অত্র অঞ্চল জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও দেশবাসী উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়ে অবহেলিত রয়েছে। একটি সেতুর অভাবে মুমূর্ষ রোগী বিনা চিকিৎসায় পথিমধ্যে ইন্তেকাল করেন। ভোলা উপকূলীয় জেলা হওয়ার কারণে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রজেক্টের মধ্যে ৪ নম্বর অবস্থানে ছিল। এই সেতু হলে ঢাকা সহ দেশের ২২ জেলার সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ হবে। ভোলা জেলায় রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদ। ভোলা থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আনতে এই সেতু ব্যবহার হবে। সেতুটি বাস্তবায়ন হলে ভোলা হবে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। একই সাথে ভোলা ও বরিশাল হবে গ্যাস ভিত্তিক শিল্পাঞ্চল; যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
ভালোবাসি দেশের অর্থনীতিতে প্রতিবছর ৫-৬ লক্ষ কোটি টাকার গ্যাস দিচ্ছে। তাই এই গ্যাস সম্পদের ভোলা বাসির হক ও অগ্রাধিকার রয়েছে। আমরা ভোলোবাসি প্রয়োজনে জিওবি ফান্ড থেকেই মাত্র ১৭ হাজার কোটি টাকা অর্থায়ন ও বাস্তবায়ন চাই। এছাড়াও চীন দক্ষিণ কোরিয়া জাপান ও এডিপি জেলা বরিশাল নির্মাণ কাজ অধ্যয়নের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
প্রধান অতিথির তার বক্তব্য শেষে ৫ দফা দাবী জানিয়ে বলেন, আমাদের প্রিয় জন্মস্থান ভোলার উপরিউক্ত অঞ্চলের কথা বিবেচনা করে হাজারো শহীদের রক্তে অর্জিত অন্তবর্তী সরকারের মাননীয় জেলা প্রশাসকের নিকট পাঁচ দফা দাবিগুলো জানাচ্ছি-
১. ভোলা জেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. ভোলায় একটি সার কারখানা স্থাপনের কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। ভোলার গ্যাসকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে ভোলাতে একটি সার কারখানা স্থাপন করে দেশের কৃষক ভাইদের চাহিদা মেটানো ও বোলার অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩. ভোলার বিশাল রিজার্ভের গ্যাস তরলীকৃত করে নেওয়ার পরিবর্তে ভোলা-বরিশাল বহুমুখী সেতু বাস্তবায়ন করে সে সেতুর সাথে পাইপলাইন দিয়ে ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রীডে নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. ভোলার বাসা/ বাড়িতে ১% গ্যাস ব্যবহার করা হবে এবং ভোলাতে যেসব রাইজার দেওয়া হয়েছে সেসব রাইজারে গ্যাস অবিলম্বে চালু করতে হবে।
৫. অবিলম্বে ভোলার ইকোনমিক জোন গড়ে তুলে বেকার যুব সমাজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে শেষে আগামী ২২ নভেম্বর’২৪ রোজ শুক্রবার বিকাল তিনটায় ভোলা সরকারি স্কুল মাঠে ভোলার গ্যাস ভোলায় চাই ও ভোলা বরিশাল সেতু বাস্তবায়নে দাবিতে গণ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচি ঘোষণা শেষে হুঁশিয়ারি কন্ঠে বলেন, ভোলার গণ মানুষের প্রাণের দাবি ভোলার গ্যাস বলার প্রতিটি ঘরে ঘরে চাই ও ভোলা বরিশাল সেতু যদি বাস্তবায়িত না হয় তাহলে, আরো বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। মা গণ মানুষের আন্দোলনে ভোলাকে সমগ্র বাংলাদেশ থেকে অচল করে দেয়া হবে।
সভাপতিত্ব করেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভোলা জেলা উত্তর শাখার সভাপতি মাওলানা আতাউর রহমান মোমতাজী।
এসময় বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ভোলা জেলা উত্তর শাখার সেক্রেটারি মাওলানা তরিকুল ইসলাম তারেক, জয়েন্ট সেক্রেটারি মুফতি আব্দুল মোমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা ইউসুফ আদনান, ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক এইচএম ইব্রাহিম আরিফ, ভোলা সদর থানা শাখার সহ-সভাপতি মাওলানা শরিফুল ইসলাম সাইফি, সেক্রেটারি মুফতি ইমরান হোসাইন, পৌর শাখার সভাপতি মাওলানা আক্তার হোসাইন, ইসলমী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ ভোলা জেলা উত্তর শাখার সেক্রেটারি মাওলানা গোলাম মোর্শেদ, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ ভোলা জেলা উত্তর শাখার সভাপতি মাওলানা শোয়াইব আহমেদ ফরিদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ভোলা জেলা উত্তর শাখার সভাপতি মুহাম্মাদ আবু জাফর, সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সহ জেলা, থানা ও ইউনিয়নের প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।