ইউসুফ হোসেন নীরব,
৭০ দশকের শেষে বা ৮০ দশকের জন্য প্রথম শ্রেণীর পাঠ্য প্রস্তুত রূপে নির্ধারিত চয়নিকা বই এর (প্রথমপাঠ) বাগবাকুম পায়রা, হাঁটি হাঁটি পা পা, চলে হন্ হন্, ক্রিং ক্রিং টেলিফোন, রামগরুড়ের ছানা হাসতে তাদের মানা, মামুদ মিয়া বেকার কিংবা নুনের মতো ভালোবাসা গল্পগুলো হয়তো অনেকের মনে আজও গেঁথে রয়েছে। হয়তো এই গল্পের সঙ্গে অনেকের পরিচয় হয়নি। সেই সন্ধ্যে হলেই পাল্লা দিয়ে কুপি কিংবা হারিকেনের আলোতে বিভিন্ন ভঙ্গিতে উচ্চস্বরে বই পড়া এখন আর চোখে পড়ে না। কালর বিবর্তনে কিংবা নেট দুনিয়ায় জতাকলে পিষ্ট হয়ে বর্তমান শিক্ষার্থীরা তা ভুলেই গেছে। এখন আর গ্রামগঞ্জে সচরাচর সন্ধ্যার পরে একজনের পড়াশুনে আরেকজন পাল্লা দিয়ে বই পড়ে না। কোন মা-বাবা তার সন্তানকেও বলে না যে অমুকে পড়তেছে তুই বসে আছিস! তুইও বই নিয়ে পড়তে বস। অথচ ১০/ ১২ বছর আগেও সন্ধ্যার পর চারপাশ থেকে বিভিন্ন স্বরে ও বিভিন্ন ভঙ্গিতে বই পড়ার আওয়াজ শোনা যেত। পরীক্ষা কাছাকাছি থাকলে তো কথাই নেই। সহপাঠী বন্ধু দিনে ও রাতে কতক্ষণ পড়ালেখা করে গোপনে খোঁজ নিয়ে তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করা হতো আর পরিক্ষার আগ মুহূর্তে পুরাতন বই ও পুরাতন গাইড সংগ্ৰহে ব্যাস্ত সময় পার করত। সবচাইতে খারাপ ছাত্রটিও রাত-দিন লেখাপড়ায় ব্যস্ত সময় পার করত। এমনও দেখা গিয়েছে পরীক্ষার আগে গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসতো। শিক্ষার্থীদের বাজারে তো দূরের কথা সন্ধ্যার পর ঘরের বাইরে দেখলেই সবাই অবাক হত এবং শাসন করতো। স্কুল থেকে বেত উঠে যাওয়া এবং অভিভাবকদের শাসনব্যবস্থা না থাকার কারণে অনেক রাত পর্যন্ত ছেলেরা দলবেঁধে বাজারে আড্ডা দেওয়া। অনলাইন অফলাইন গ্রুপ চ্যাটিং, পাবজি ফ্রী-ফায়ার টিকটক সহ চুলে বিভিন্ন রং ও বিভিন্ন স্টাইলে চুলের কাটিং এবং বড় ভাই দাবি করে গ্রুপিং সৃষ্টি করা পাড়া-মহল্লায় মারামারি করা, শিক্ষাগুরুর সাথে বেয়াদবী, শিক্ষকের নামে মিথ্যাচার করা এগুলোই এখন তাদের পছন্দের তালিকায়। এভাবে যদি বর্তমান শিক্ষার্থীরা অভিভাবকদের নাগালের বাইরে চলে যায় তাহলে ঠিকই একদিন নেশা ও ক্রাইম জগতে ধাবিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এমনি যদি চলতে থাকে তাহলে বর্তমান শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে প্রশ্ন জনমনে।