স্টাফ রিপোর্টার,
দৈনিক ভোলাটাইমস্ ::ভোলার লালমোহনে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি ও বেতন উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশারের মেয়ে আকলিমা নার্গিস এর বিরুদ্ধে। অনুসন্ধান ও সরজমিনে
গিয়ে জানা যায়।
বোরহানউদ্দিন দেউলা ৩নং ওয়ার্ডের ও বর্তমান লালমোহন পৌর ৪নং ওয়ার্ডের
বাসিন্দা মৃত মোহাম্মদ আলী দালালের ছেলে আবুল বাশার ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন কাগজপত্রে যাহার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে তিনি।
বোরহানউদ্দিন উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় ২৯৫ জন এই ২৯৫ জনের তালিকার মধ্যে আবুল বাশারের কোনো নাম নেই এবং আবুল বাশার কখনো মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাননি এবং গেজেটে তার নামও আসেনি এমনটাই আবুল বাশারের বক্তব্যে বলা হয়েছে।
তাহলে কিসের ভিত্তিতে আবুল বাশার নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন এবং তার মেয়ে তাসলিমা নার্গিস লালমোহন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি ও বেতন উত্তোলন করেন।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশারের মেয়ে তাসলিমা নার্গিসের সঙ্গে কথা বলতে সংবাদকর্মীর একটি টিম লালমোহন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান এবং আবুল বাশারের মেয়ে তাসলিমা নার্গিসের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয় যে তাসলিমা নার্গিস ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি ও বেতন উত্তোলন করেন।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার কয়েকজন সহযোদ্ধার প্রত্যয়ন পত্র কম্পিউটার স্ক্যানিংসহ সহযোদ্ধাদের স্বাক্ষর জাল করে প্রত্যয়নপত্র তৈরি করেন বললেও প্রমাণ রয়েছে।
শুধু তাই নয় কয়টি সনদও দেখিয়েছে যাহা কম্পিউটারে স্ক্যানিং করা এবং ওই সনদে কোন গেজেটের অফিসারের স্বাক্ষর নেই। যেটা শুধুমাত্র নিজের হাতের লেখা।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার একটি প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ করেছেন বোরহানউদ্দিন উপজেলার ২নং দেউলা ইউনিয়নের
মৃত মো: ইমদাদ উল্ল্যাহ তালুকদারের ছেলে
হাসান এগিন ওরফে হাসান আলী তার সহযোগী যোদ্ধা ছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধা হাসান এগনি ওরফে হাসান আলীর সঙ্গে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,
আমরা প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধ করেছি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হলে অবশ্যই গেজেটে যেতে তার নাম থাকবে
এবং মুক্তিযোদ্ধা ভাতার আওতায় থাকবে।
আমাদের যারা সহযোদ্ধা ছিল
তাদেরকে অবশ্যই আমি চিনবো এবং সবার নাম আমার এখনো মনে আছে কিন্তু আবুল বাশার নামে আমাদের কোন সহযোদ্ধা ছিল না।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার আরো একজনকে সহযোগী যোদ্ধা হিসাবে উল্লেখ করেন এবং তার প্রত্যয়নপত্র ও স্বাক্ষর জাল করেন।
সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সংবাদকর্মীর একটি টিম ট্রান্স কমান্ডার ও
প্রাক্তন থানা কমান্ডার আছমত আলী মিয়ার সাক্ষাৎকারও গ্রহণ করেন।
ওই সাক্ষাৎকারে ফ্রান্স কমান্ডার ও প্রাক্তন থানা কমান্ডার আছমত আলী মিয়া
যুদ্ধ চলাকালীন সেনাবাহিনীতে কর্মরত
ছিলেন।
কোথায় ও কিভাবে কার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধ পরিচালনা করেন এক এক করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও সহ- সহযোদ্ধাদের নাম বলেন।
তিনি আরো বলেন
আবুল বাশার নামে তাদের কোন সহযোদ্ধা ছিলো না।
তিনি এ উল্লেখ করেন আবুল বাশারের গেজেটে নাম নেই। আবুল বাশার তো ব্যাংকে চাকরি করতেন তিনি কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন এবং তার মেয়েকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি করেন।
তিনি আরো বলেন
প্রত্যয়নপত্র ও স্বাক্ষর জান করে কখনো মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যায় না।
বোরহানউদ্দিন দেউলা গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরি করে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে এবং ওই ভুয়া সনদ
প্রদান করে আবুল বাশারের মেয়ে আকলিমা নার্গিস মুক্তিযোদ্ধা কোটায়
চাকরি ও বেতন উত্তোলন করে
করেন কিভাবে।
এ বিষয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা বলেন
মেধাবীরা মেধা যাচাই করেও চাকরি পায় না অথচ আবুল বাশার ভুয়া মুক্তিযুদ্ধা গেজেটে তার নাম নেই
তিনি মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত ভাতা পান না অথচ তার মেয়ে আকলিমা নার্গিস ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি ও বেতন উত্তোলন করেন কিভাবে।
আবুল বাশার কোথায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, তার থানা কমান্ডার কে কার সাথে যুদ্ধ করেছে কিছুই বলতে পারেনা অথচ তার মেয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার বলেন
আমনেরা ইচ্ছা করলে আমার ক্ষতি করতে পারবেন। আমনেরা তো আমার সার্টিফিকেট দেখছেন
আমনেরা লেখবেন
যে আমার সার্টিফিকেট সঠি,
এই উপকার টা আমার করেন।
আমার মেয়েই আমারে চালায় আমনেরা এইভাবে লিইক্কেন।
এ বিষয়ে লালমোহন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিন এর সঙ্গে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,
হ্যাঁ আমি শুনেছি আকলিমা নার্গিস ২০১০ সালে মুক্তিযুদ্ধা কোটায় সহকারী শিক্ষিকা পদে লালমোহন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চাকুরী করেন।
এ বিষয়ে লালমোহন নির্বাহী কর্মকর্তা মো: তৌহিদুল ইসলাম বলেন এ বিষয়ে আমি অবগত নই জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করলে আমরা অবশ্যই তদন্ত করে দেখব।