

ভোলা টাইমস ডেক্স,
ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মইনুল হোসেন বিপ্লব ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান বিন্তির বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিপ্লব আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের পালক ছেলে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) দুদকের পিপি অ্যাডভোকেট শাহাদত হোসেন শাহীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গত ১৭ এপ্রিল দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় বরিশালের সহকারী পরিচালক খন্দকার কামরুজ্জামান বাদী হয়ে অবৈধভাবে (জ্ঞাত আয় বহির্ভূত) প্রায় ১২ কোটি ১৫ লাখ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পৃথক দুটি মামলা করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মইনুল হোসেনের (বিপ্লব) বিরুদ্ধে ১১ কোটি ৭৫ লাখ ৭৩ হাজার ১৫ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান বিন্তির বিরুদ্ধে ৩৯ লাখ ৪২ হাজার ৭৭২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ সম্পদের মালিক বনে যাওয়ার বিষয়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করে দুদক।
ভোলার বিশেষ জজ আদালতে রোববার (২০ এপ্রিল) দাখিল হওয়া দুদকের মামলা সূত্রে জানা যায়, মইনুল হোসেন বিপ্লবের নামে বিভিন্ন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করা ৪১টি দলিলের মাধ্যমে ১৩ কোটি ৬ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৮ টাকার স্থাবর ও বিভিন্ন ব্যবসা, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগসহ ব্যাংকে নিজ নামে, স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে সঞ্চয় হিসাব, এফডিআর, ডাবল স্কিম বেনিফিট, বিভিন্ন মেয়াদি সঞ্চয়পত্র, ফিক্সড ডিপোজিট বাবদ মোট ৩৩ কোটি ৭০ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩৪ টাকা পাওয়া গেছে।
তার ২০০৯-২০১০ করবর্ষ থেকে ২০২৩-২০২৪ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর নথিতে মোট ৭৪ কোটি ৯৯ লাখ ০৯ হাজার ৯৪৫ টাকা আয় দেখিয়েছেন। এর মধ্যে রেমিটেন্স, ভুয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গাড়ি বিক্রি ও মৎস্য খাত থেকে আয় বাবদ ২৯ কোটি ৫৩ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩০ টাকার আয় বেশি দেখিয়েছেন যার বৈধ উৎস দুদক অনুসন্ধানে পাননি।
অনুসন্ধানে দুদক তার গ্রহণযোগ্য (বৈধ) আয় পান ৪৫ কোটি ৪৫ লাখ ৭৩ হাজার ২১৫ টাকা। এ সময়ে পারিবারিক ও অন্যান্য খাতে ব্যয় করেছেন ২৩ কোটি ৫১ লাখ ৭ হাজার ৩৯৬ টাকা। এ টাকা বাদে অবশিষ্ট থাকে ২১ কোটি ৯৪ লাখ ৬৫ হাজার ৮১৯ টাকা। অথচ তার সম্পদের পরিমাণ ৩৩ কোটি ৭০ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩৪ টাকা।
এ হিসাব অনুযায়ী ১১ কোটি ৭৫ লাখ ৭৩ হাজার ১৫ টাকার সম্পদের কোনো বৈধ উৎস পায়নি দুদক। একইভাবে মইনুল হোসেনের স্ত্রী ইসরাত জাহান বিন্তির বৈধ আয় থকে ৩৯ লাখ ৪২ হাজার ৭৭২ টাকা বেশি (অবৈধ) পাওয়া গেছে। এসব অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে ২০০৪ এর ২৭ ধারার ১ উপধারা অনুযায়ী মইনুল হোসেন বিপ্লব ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান বিন্তির বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়।
বিপ্লবের বৈপ্লবিক উত্থান:
প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের বড় ভাই আলী আশরাফের ছোট ছেলে মইনুল হোসেন বিপ্লব। বাল্যকালে বাবার মৃত্যুর পর চাচা তোফায়েল আহমেদের পিতৃ স্নেহে বড় হন তিনি। তোফায়েল আহমেদ ভাতিজাকে নিজের ছেলে হিসাবে স্বীকৃতি দেন। পড়াশোনা করান অস্ট্রেলিয়ায়। বিপ্লবের বড় ভাই আলী আজম মুকুল ভোলা-২ (দৌলতখান- বোরহানউদ্দিন) আসনের ৩ বারের সংসদ সদস্য।
অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরে চাচার সুবাধে বনে যান ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক। প্রথমে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়ে জেলার সব নিয়ন্ত্রণ ছিল তার হাতেই। আওয়ামী লীগের রাজনীতি, ঠিকাদারি, ব্যবসা-বাণিজ্য সবই ছিল তার একক নিয়ন্ত্রণে। অল্পদিনেই সবকিছু কব্জা করে নেন মইনুল।
আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি ও সাবেক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী একেএম শাজাহান কামালের ডাক্তার মেয়ে ইসরাত জাহান বিন্তিকে বিয়ে করেন বিপ্লব। বাবা ও শ্বশুর মন্ত্রী, বড় ভাই এমপি তাই সবই ছিল তার হাতের মুঠোয়। তবে ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে চলে যান বিপ্লব।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য মোবাইলে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।