

নিজস্ব প্রতিবেদক,
দৈনিক ভোলা টাইমস্::তুমি রবে নিরবে-দেশসেরা ক্রাইম রিপোর্টার সাইদুর রহমান রিমন। সময় কতো দ্রুত হারিয়ে যায় মহাকালের গর্ভে। থেকে যায় শুধু ভবিষ্যত পরিকল্পনা আর লালিত স্বপ্ন। এখন সেই অসমাপ্ত স্বপ্নের বীজ অংকুরিত করে তা মহিরুহে পরিণত করার দায়িত্ব আপনার আমার সকল রিমন ভক্তদের। যারা সাংবাদিক নেতা সাঈদুর রহমান রিমন এর সাথে দীর্ঘদিন চলেছেন,তাঁরা জানেন সাংবাদিক রিমন সারাবছর দুটো ফ্লাটের ভাড়া ও খরচ বহন করতেন। একটিতে থাকেন সাংবাদিক রিমন এর কন্যা সন্তানের মা প্রথম স্ত্রী চামেলী। আরেকটিতে থাকেন দ্বিতীয় স্ত্রী মোছাঃ নাসিমা আক্তার।আর সাংবাদিক রিমন এর দ্বিতীয় সহধর্মিণীর পরিবার সংসার মানেই বিশাল এক কর্মযজ্ঞ বড় বড় পত্রিকা হাউজের অলিখিত প্রধান কার্যালয়। সারাটিদিন-রাত ছোট-বড় সাংবাদিকদের পদচারণায় মুখরিত ছিলো নাসিমা রহমান তথা সাংবাদিক রিমন এর ছোটো স্ত্রীর সংসার। দৈনিক আজাদীর কন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এবং দৈনিক গণকন্ঠ পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার সাংবাদিক সাইফ উদ্দীন আল-আজাদ বলেন, রিমন ভাইকে যতটুকো চিনতাম জানতাম এবং তার পরিবার সম্পর্কে বলতে গেলে, রিমন ভাইয়ের মানুষিক শান্তির একমাত্র আশ্রয়স্থল ছিলো তার দ্বিতীয় সহধর্মিণী নাসিমা রহমান। নাসিমা রহমান ছিলেন নতুন নতুন গড়ে ওঠা সাংবাদিকদের মায়ের মতোন,আর সিনিয়র সাংবাদিকদের ছিলেন শ্রদ্ধার অন্যতম আশ্রয়স্থল।তার বাসায় সারাদিন-রাত ৪/৫ টা ল্যাপটপ আর ডেক্সটপে দফায় দফায় মেইল চেক, সংবাদ সংশোধন, নিউজ ছবি আপলোড, আর নতুন নতুন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির এই বিশাল কর্মযজ্ঞে দীর্ঘদিন সময় কাটানোর সৌভাগ্য অনেক সাংবাদিকেরই হয়েছে। সাংবাদিক সজিব আকবর বলেন, দৈনিক দেশবাংলার হেড অব নিউজ হিসেবে আমার প্রতিদিনের যাতায়াত ভাড়া ( মিরপুর পল্লবী টু বসুন্ধরা) তিনবেলা খাবার এমনকি চা সিগারেটের যোগান দিতেন এই নাসিমা আক্তার দাদী। সে এক অন্যরকম পরিবেশ। প্রতিদিন ডজন ডজন সাংবাদিকদের জন্য ভাত তরকারী রান্না, প্রতিদিন ৫/৬ বার চা তৈরি থেকে শুরু করে সকল কাজ হাসিমুখে নীরবে করে গেছেন আমাদের নাসিমা দাদী। এভাবেই মনের নানান ভাব প্রকাশ করতে দেখা যায়, সিনিয়র সাংবাদিক দেশসেরা ক্রাইম রিপোর্টার সাংবাদিক সাইদুর রহমান রিমনের খলিফাদের কলমের ভাষায়। অথচ শতবর্ষের সেরা সাংবাদিক সাঈদুর রহমান রিমন এর আকষ্মিক মৃত্যুতে অনেককেই দেখা গিয়েঢ়ে স্মৃতির এ্যালবাম থেকে তাঁর সাথে তোলা ডজন ডজন ছবি আপলোড করতে। অনেকেই অনেক স্মৃতি বিজড়িত কথাবার্তা আপলোড করলেও ” একজন পরিপূর্ণ সাঈদুর রহমান রিমন তৈরির নেপথ্যের কারিগর নাসিমা রহমানের কথা ” কাউকে লিখতে বা বলতে শোনা যায়নি। দেশপত্র, বাংলাদেশ প্রতিদিন, খবর বাংলাদেশ থেকে দৈনিক দেশবাংলা, বাংলাভূমির অঘোষিত প্রধান কার্যালয় ছিলো এই নাসিমা রহমানের সংসার। এখানে ছোটবড় হাজারো সাংবাদিকের স্বতঃস্ফূর্ত পদচারণাই প্রমাণ দিতো সাংবাদিক সাঈদুর রহমান রিমন শুধু সাংবাদিক নন, তিনি ছিলেন সাংবাদিকতার এক পাঠশালা, বিশ্ববিদ্যালয়। কতো সাংবাদিক যে ঢাকার বাইরে থেকেও নাসিমা রহমানের এই সংসারে আসতো তার কোনো হিসেব নেই। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন কক্সবাজার থেকে ফজলুল কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রামের কামাল পারভেজ, সোহাগ আরেফিন, সিলেট শ্রীমঙ্গল থেকে ইসমাইল মাহমুদ, চাঁদপুর থেকে রাজন, কুমিল্লা থেকে সংবাদ টিভির জুয়েল খন্দকার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গ্লোবাল টিভির আলমগীর হোসেন, মধুপুর থেকে প্রিন্স এডওয়ার্ড ম্যানসং, নর্থবেঙ্গল থেকে বিশাল রহমান, গাজীপুর সদর থেকে তুহিন সরোয়ার, গাজীপুর থেকে গোলাম সরোয়ার, আশুলিয়া সাভার থেকে কামরুজ্জামান, পারভেজ মুন্না, নূর আলম সিদ্দিকী মানু, রাজধানী ঢাকা থেকে আজিজুর রহমান টুটুল( মহম্মদপুর), নাগরিক টিভি ও এসএ টিভির ইমরান চৌধুরী, ঢাকা প্রতিদিনের সোহাগ হাওলাদার, মানবকণ্ঠের মোস্তাকিম নিবিড়, সাংবাদিক ওয়াদুদ, হুমায়ূন কবির টুটুল, মানবাধিকার নেত্রী সেহলী পারভীন, একুশে টিভির সোহেল সামি, শেরপুরের সাইফুল ইসলাম, প্রভাষক বাদল ( বাংলাদেশ প্রতিদিন), নিয়মিত স্টাফ হিসেবে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা নাসিমা আক্তারের বাড়িতে থাকতো কুমিল্লা দেবীদ্বার এর মেহেদী হাসান রিয়াদ, চট্টগ্রামের আনোয়ার, নিয়মিত আসতো তরুণ সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম যুবরাজ, সুমন, জামান (সদ্য প্রয়াত), চাঁদ সহ অসংখ্য সাংবাদিক ও শুভাকাঙ্ক্ষী। এখানে আসতো বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রায় সাড়ে ৩শ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ৭৫ এর প্রতিরোধযোদ্ধা। বাংলাদেশে সাংবাদিকতা করে সাংবাদিক রিমন এর কাছে যাতায়াত করতো অথচ তার সহধর্মিণী নাসিমা রহমানের রান্না করা ভাত একবেলাও খাননি, এমন সাংবাদিক বিরল। অথচ সাংবাদিক রিমন মৃত্যুবরণ করার পর সকলকেই দেখা গিয়েছে ভাত খেয়ে মুখ মুছে ফেলার মতো,নাসিমা আক্তারের কথা পুরোপুরি ভুলেই গিয়েছেন। একজন পুরুষ মানুষের একাধিক সংসার থাকতে পারে, কিন্তু তা বেমালুম ভুলে যাওয়াটা শুধু স্মৃতিভ্রষ্টতাই নয় এটা অপরাধ হিসেবেই গন্য। সাংবাদিক সজীব আকবর বলেন, সাঈদুর রহমান রিমন দাদাভাই আমাকে যে কতোটা ভালোবাসতেন আর প্রাধান্য দিতেন,যারা খুব কাছ থেকে দেখেছেন তারা অবগত আছেন। নাসিমা দাদীর প্রসঙ্গ উঠলেই রিমন দাদাভাই বলতেন আপনার চামেলী দাদীর অদিনের কান্ডারী হিসেবে একজন ঊর্মি আছে। কিন্তু আমার ছোটো স্ত্রী আপনার নাসিমা দাদীর কে আছে ? আমার অবর্তমানে তার বেঁচে থাকার অবল্বনটা আসলে কী? আমার অবর্তমানে সে কোথায় থাকবে, কি খাবে, কিভাবে জীবিকানির্বাহ করবে? এসব ভেবে রিমন দাদাভাই ভীষণ আপসেট হয়ে পড়তেন। আমাকে প্রায় সময়ই বলতেন আমার অবর্তমানে আপনার নাসিমা দাদীকে একটু দেখে রাইখেন সজীব দাদা। তিনি আরো বলতেন ২০০৯ সালে আপনার নাসিমা দাদীর সাথে বিয়ে হওয়ার পর মুন্সিগঞ্জে তার শেষ সম্বল যেটুকু ছিলো তাও দফায় দফায় দেশপত্র, দেশবাংলা পত্রিকার প্রেসবিল আর স্টাফদের বেতন-ভাতা দিতে যেয়ে শেষ করে ফেলেছে। তার ( নাসিমা দাদীর) ব্যাংকে যে কয়টা টাকা ছিলো তাও দেশবাংলা পত্রিকার ল্যাপটপ, কম্পিউটার, পত্রিকার আসবাবপত্র কিনতে যেয়ে ব্যাংক ব্যালেন্স জিরো করে ফেলেছে। নাসিমা দাদী আর রিমন দাদাভাই এর সাথে শেরপুর নালিতাবাড়ী সংলগ্ন মেঘালয় পাহাড়, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল মধুপুর, পতেঙ্গা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি, অনেক স্মৃতি জমা হয়ে আছে। চামেলী দাদীর সাথেও আমি বগুড়া, নওগাঁ, রংপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কক্সবাজার, পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকতার বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ, বিভাগীয় সম্মেলন সহ সংবাদ সংগ্রহের কাজে অনেক জেলা উপজেলা শহরসহ নিভৃতপল্লী, পাহাড় জঙ্গলে ভ্রমণ করেছি।রিমন দাদাভাই যেখানেই গেছেন তার স্ত্রীদের স্বসম্মানে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেন। বিশেষ করে নাসিমা দাদীর প্রসঙ্গ উঠলেই বলতেন নাসিমা শুধু আমার ছোটো স্ত্রীই নয়, নাসিমা হলো আমার হৃদপিণ্ড, আমার বামপাশের পাঁজরের হাড়। সে শুধু আমার স্ত্রীই নয় সে আমার সকল ভালোমন্দ কাজের নীরব স্বাক্ষী। এভাবেই শত শত সাংবাদিক স্মৃতিচারণ করে একজন সাংবাদিক ক্রাইম রিপোর্টারের রাজা খ্যাত সাইদুর রহমান রিমনের,আর রিমনের কথা বলতে গেলেই উঠে আসে তার সহধর্মিণী নাসিমা আক্তার।