

কামরুল হাসান অটল ::
ভোলার বোরহানউদ্দিন কামিল মাদ্রাসার সহকারী প্রভাষক পদমর্যাদার মুহাদ্দিস, জনাব মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ ওরফে ওয়াদুদ মাওলানার বিরুদ্ধে:- ভুয়া প্রমাণপত্র তৈরি করে, নিজের বয়স ২০ বছর কমিয়ে, চাকরিতে যোগদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি ১৯৯৫ সনে এমন প্রতারণার মাধ্যমে নিজের জন্মসাল ১৯৭০ দেখিয়ে চাকুরিতে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে চাকরিতে দেয়া তথ্য সঠিক প্রমাণের লক্ষে:- তার জাতীয় পরিচয়পত্র(নং ৬৪৩৭২১৬১২৭)তে ১ মার্চ ১৯৭০ নথিভুক্ত করান। এমনই প্রতারণার মাধ্যমে ৩০ বছর যাবত বেতনের নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, আব্দুল ওয়াদুদ চট্রগ্রাম হাটহাজারীর দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা থেকে ১৯৭৬-৭৭ সনে নিয়মিত ক্লাস করে দাওরায়ে হাদীস পাশ করেন, যার মূল্যায়ন মাস্টার্স সমমানের সনদ। সেখানে তার জন্ম ১৯৫০ লিপিবদ্ধ করা। ১৯৭০ সনে তার জন্ম সত্য হলে বুঝতে হবে মাত্র ৭ বছর বয়সে তিনি মাস্টার্স পাশ করেছেন, যা অসম্ভব। আব্দুল ওয়াদুদের ছোট বোন, বিবি রহিমার জাতীয় পরিচয় পত্র ( নং ২৩৫৩৭৩৩৭১৬ ) তে তার জন্ম ১৯৫২ উল্লেখ করা। ছোট বোনের জন্ম ১৯৫২ সনে হলে বড় ভাইর জন্ম কিভাবে ১৯৭০ সনে হয় যা একটি বড় প্রশ্ন। আব্দুল ওয়াদুদের ছেলে মোঃ আব্দুস সালামের জাতীয় পরিচয় পত্র ( নং ৩৭৪৮৮৮৪৮২৬)তে তার জন্মসাল ১৯৭৯ উল্লেখ করা। তবে কি আব্দুল ওয়াদুদ মাত্র ৯ বছর বয়সে বাবা হয়েছেন? যা অবিশ্বাস্য।
এমনই প্রশ্নগুলো অভিযুক্ত আব্দুল ওয়াদুদকে করা হলে তার কথার সারমর্মে জানা যায়, তিনি বাড়ির পাশের প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করার লক্ষ নিয়ে বয়স্ক অবস্থায় কামিল “দাওরায়ে হাদিসের সনদ কোনো দপ্তরে গ্রহনযোগ্য ছিলোনা, তাই আবার কামিল মাদ্রাসায় শুরু থেকে পড়তে হয়েছে, তাই আমাকে বয়স কমিয়ে দিতে হয়েছে”।
কি অদ্ভুত যুক্তি অভিযুক্তের! বিষয়টা এমন:- আব্দুল ওয়াদুদ মাস্টার্স পাশ করার পরে একটি টাইম মেশিন পেয়ে উঠে বসলেন এবং মেশিনকে কমান্ড করলেন, ” আমাকে আবার শিশু বয়সে, শিশু শ্রেনীতে নিয়ে যাও”। কমান্ড শুনে টাইম মেশিন তাকে শিশু বানিয়ে কামিল মাদ্রাসায় নিয়ে আসেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বোরহান উদ্দিন কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা এ বি আহম্মদ উল্লাহ আনসারির বলা কথার সারমর্ম হলো:- ” তাকে যেই সকল সনদ দেখে নেয়া হয়েছিলো সেখানে তার জন্ম সাল চাকরির জন্য গ্রহনযোগ্য ছিলো”।
এই বিষয়ে বরিশাল শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক জনাব জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “অভিযুক্ত ব্যাক্তি যেই দপ্তরের অধীনেই হোকনা কেন তার বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনি ব্যাবস্থা নেয়া হবে, না নেয়ার কোনো সুযোগ নেই”।
আমরা জানি বয়সের ছাপ চেহারায় ফুটে ওঠে বা চেহারা দেখলেই একজন মানুষের বয়স অনুমান করা যায়। তাহলে একজন মানুষ কিভাবে ৪৫ বছর বয়সে নিজের ২৫ বছর হওয়ার প্রমাণপত্র বানিয়ে চাকরি বাগিয়ে নেয়? নিয়োগ কর্তারা কি কিছুই অনুমান করতে পারেননি? নাকি জেনে বুঝেই দুর্নীতিতে মজে নিয়োগ দিয়েছিলেন? কাগজে কলমে তার বর্তমান বয়স ৫৫ বছর হলেও তাকে দেখে সহজেই অনুমান করা যায় তিনি ৭৫উর্ধ একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষ। যেই দেশে ডিগ্রীধারী লক্ষ লক্ষ বেকার যুবক ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেই দেশে ২০ বছর বয়স লুকিয়ে, অবসরের বয়স অনেক আগে পেড়িয়ে গেলেও চাকুরির পদ আগলে রেখে, বেতনের নামে সরকারি অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি দেশ, জাতি ও শিক্ষিত বেকারদের প্রতি ভেংচি কাটার মতো নয়কি?
অভিযুক্ত ব্যাক্তি নিজের বিশ বছর বয়স কাগজে কলমে চুরি করে বেকারদের প্রতি এমনই একটি উপহাসের জন্ম দিয়েছেন। তার এমন জালিয়াতি ও প্রতারণার কারনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং কামিল মাদ্রাসার সনদে বয়স লুকানোর পুরনো প্রচলন বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে অবিলম্বে কঠোর ভুমিকা রাখার দাবী করেছেন সচেতন মহল।