মো. সোহান খাঁ এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এ সাফল্য সোহান ও তার দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের অফুরন্ত আনন্দ এনে দিয়েছে। তবে সোহানসহ তার পরিবার এখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন সোহানের ভর্তি ও পড়ালেখা নিয়ে।
ছোটবেলা থেকে বাবা-মায়ের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম দেখে আসছেন সোহান। দিনমজুরের কাজ করা বাবার সংসারের ভরণপোষণের টানাপোড়েন নিত্যদিনের সঙ্গী। আরেকদিকে সংসারকে টিকিয়ে রাখতে মায়ের পরিশ্রম অভাবনীয়। নানাবিধ চাহিদা আর অভাব যেন নিত্য সময়ের সাথী সোহানের পরিবারের।
ছোটবেলা থেকে দৃঢ় মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের অধিকারী সোহান৷ অভাব ও সংসারের টানাপড়েনকে সাথে নিয়ে স্কুল ও কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে আর্থিক সংকটের কারণে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া অনিশ্চয়তার মুখ দেখছে।
পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়ীয়া ইউনিয়নের কাঁকীয়ান গ্রামের দিনমজুর ইকবাল খাঁর ছেলে সোহান খাঁ। স্থানীয় কাঁকীয়ান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শেষ করে সাতবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ ও পাবনার সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ইউনিটের ৩য় শিফটে প্রথমস্থান অর্জন করে মেধা তালিকায় স্থান করে নিয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
অভাব ও সমস্যা নিয়ে এতদূর পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে গেলেও এবার থমকে গেছে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির স্বপ্ন। তবুও স্বপ্ন বুনছেন সরকার বা বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শেষ করে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারবেন ৷
বুধবার সোহানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনশেডের একটি চৌচালা ঘর ছাড়া কিছুই নেই। বাবার সামান্য অর্থ দিয়ে ঘরটি করে সবাই বসবাস করেন। এক ঘরের মধ্যে ৪ ভাইসহ পরিবারের সবাই বাস করেন। ঘরের মধ্যে কাঠের চৌকির একাংশজুড়ে বই পড়ে আছে।
আলাপকালে মা আছিয়া খাতুন শোনান টানাপোড়েনের মধ্যে সোহানের সাফল্য ও জীবনসংগ্রামের কথা। সোহানের মা আছিয়া খাতুন বলেন, আমার ৪ ছেলে। আমাদের প্রায় ৩ শতক বাড়ির ভিটার জমি ছাড়া নিজস্ব কোনো জায়গা জমি নেই। সোহানের বাবা দিনমজুর হিসেবে যা রোজগার করে তা দিয়ে সংসার কোনোমত করে চালিয়ে নেই। আমার মেজো ছেলে কষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এখন তার ভর্তি খরচ, যাতায়াতসহ ওখানে থাকার খরচ দেওয়ার মতো আমার সামর্থ্য নেই। আপনাদের সবাইকে আমার ছেলের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করছি৷
দুই চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে সোহান খাঁ বলেন, আমার বাবা-মা অনেক কষ্ট করেন। আমার বাবা দিনমজুরের কাজ করে যা আয় করে তা সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়৷ এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। টাকার কারণে আমি ভর্তি হতে পারছি না৷ আমি চাই না আমার পড়াশোনা কোনোভাবে থেমে যাক এ পর্যায়ে এসে। আপনাদের সহযোগিতা আমাকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমি আশাবাদী।
প্রতিবেশী শামসুর রহমান বলেন, সোহানের বাবা-মা অনেক কষ্ট করেন। আমরা চাই সে আরও বেশি সফলতা অর্জন করুক। আপনারা সবাই তার পাশে থাকবেন৷
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক অতুল কুমার দাস বলেন, সোহান অনেক মেধাবী ছাত্র। সে ভবিষ্যতে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারবে। এখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আমরা চাই তার পড়াশোনা যেন থেমে না যায়। সরকার ও বিত্তবানসহ সবাই তার পাশে থেকে তাকে সহযোগিতা করবেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আমজাদ হোসেন বলেন, সোহানের পরিবার পারিবারিকভাবে অনেক অসহায় একটি পরিবার৷
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো তাকে সহযোগিতা করা হবে।
প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক- মোঃ আলী জিন্নাহ (রাজিব), ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক- মোঃ হেলাল গোলদার, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়- আমানত পাড়া, ভোলা। ই-মেইল- [email protected], মোবাইল- ০১৭১১৪৬৯৫৩৯
Bhola Times © All rights reserved.