

শ্রী রিজয় বাইন,
ভোলা টাইমস :: প্রত্যন্ত জনপদের কোনো এক নিভৃত কোণে জন্ম নেয়া কিছু মানুষ কেবল নিজেদের ভাগ্যই বদলান না বদলে দেন এলাকার ভবিষ্যৎ, জাগিয়ে তোলেন স্বপ্ন দেখার সাহস। তেমনই একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব অ্যাডভোকেট সঞ্জয় কুমার দে দুর্জয়। ভোলার মনপুরা উপজেলার চরউমেদ গ্রামের এই সন্তান দারিদ্র্য, অভাব ও জীবনের কঠিন সংগ্রামকে পেছনে ফেলে পৌঁছে গেছেন দেশের সর্বোচ্চ আইন অঙ্গনে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে। সঞ্জয়ের জীবনের শুরুটা ছিল অভাব-অনটনে ঘেরা। চরউমেদের মতো একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেড়ে ওঠা এই তরুণের কাছে বই, খাতা, স্কুল—সবই ছিল একেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবুও হার মানেননি। প্রথম শিক্ষা শুরু হয় স্থানীয় রায়চাঁদ উদয় চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে সফলভাবে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন মনপুরা ডিগ্রি কলেজে। এখান থেকেই সম্পন্ন করেন এইচএসসি এবং পরবর্তীতে স্নাতক ডিগ্রি। তবে দুর্জয়ের জীবনে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে এইচএসসি পড়াকালীন — পিতৃবিয়োগ। পরিবারের হাল ধরতে হয় তাঁকেই। জীবিকার তাগিদে শুরু করেন চিত্রাঙ্কনের কাজ, রংতুলি হাতে তুলে নেন। দিনের পর দিন ছবি এঁকে অর্থ উপার্জন করেন, আর রাতে চালিয়ে যান পড়ালেখা। চলতে থাকে কঠোর পরিশ্রম। একটাই স্বপ্ন “একদিন আমি হবো আইনজীবী।” সেই লক্ষ্যে তিনি পাড়ি জমান ঢাকায়। ভর্তি হন ঢাকা আইডিয়াল ল কলেজে, সেখান থেকে সম্পন্ন করেন এলএল.বি প্রিলিমিনারি। এরপর ভর্তি হন মেট্রোপলিস আইডিয়াল ল কলেজে, সেখান থেকে সফলভাবে এলএল.বি ফাইনাল সম্পন্ন করেন। শুধু এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। উচ্চশিক্ষার প্রতি গভীর আগ্রহ নিয়ে ভর্তি হন কবি নজরুল সরকারি কলেজে এবং সম্পন্ন করেন মাস্টার্স ডিগ্রি। পর্যায়ক্রমে তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্যপদ অর্জন করেন এবং ঢাকা বারে আইন পেশা শুরু করেন। নিজের দক্ষতা, নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে অল্প সময়েই আইন অঙ্গনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ২০২৫ সালে তিনি উত্তীর্ণ হন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে — যা তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য এবং চরউমেদবাসীর জন্য এক গর্বের মুহূর্ত। সঞ্জয় কুমার দে দুর্জয়ের জীবন আমাদের সামনে একটি শক্ত বার্তা দেয়: জন্ম নয়, কর্মই পরিচয়ের প্রকৃত মানদণ্ড। গ্রাম থেকে উঠে এসেও পৌঁছানো যায় জাতীয় পর্যায়ে, যদি থাকে অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাস। তিনি শুধু একজন আইনজীবী নন, তিনি এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা। তরুণদের জন্য দৃষ্টান্ত, গ্রামবাংলার জন্য গর্ব, ও প্রমাণ যে প্রতিকূলতার মধ্যেও মানুষ পারে সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে। চরউমেদ, রমাগঞ্জ ইউনিয়ন, এমনকি পুরো মনপুরা তথা ভোলাবাসী আজ গর্বিত সঞ্জয় কুমার দে দুর্জয়ের অর্জনে। এই গর্বিত সন্তান প্রমাণ করেছেন “সংগ্রাম যদি থাকে জীবনের অংশ, তাহলে সাফল্য হবেই পরিণতি।” একটি মাটির ঘর থেকেও উঠে আসতে পারে দেশের শীর্ষ আদালতের একজন প্রজ্ঞাবান আইনজীবী। আজ আমরা সঞ্জয় কুমার দে দুর্জয়ের প্রতি জানাই অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও অভিনন্দন। তাঁর এই উজ্জ্বল পথচলা যেন নতুন প্রজন্মের চোখে স্বপ্ন বুনে দেয় — যে স্বপ্ন শুধু নিজের নয়, গোটা সমাজের।